মাসুদ আলম: বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বলেন, বিএসএফ মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা সদস্যদের মোটিভেশন এবং মনিটরিংয়ের অভাবের কারণে অনেক ক্ষেত্রে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা বন্ধে আমি এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়েছি। বিএসএফ যদি তাদের কন্ট্রোলিংয়ের বিষয়টি আরও বাড়ায় এবং এসব বিষয় যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে সুফল পাওয়া যাবে। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিজিবি সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। গত ১১ থেকে ১৪ জুন ভারতের নয়াদিল্লিতে চার দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি আরও বলেন, সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিভিন্ন সময় ঘটে থাকে। যা অনেকটা কাকতালীয়। তবে সীমান্তে যে কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিজিবি কিংবা বিএসএফের জন্য বিব্রতকর।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন,  জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিজিবির কাঁধে অর্পিত সব দায়-দায়িত্ব পালনে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। যেসব দায়িত্ব আসবে সব কিছু দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করব। এছাড়া কোনো  কিছু বাকি থাকলেও সেসব গ্রহণ করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনে বাহিনীর পক্ষ থেকে বড় একটি ভূমিকা থাকে। 

তিনি  বলেন, সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে নন-লেথাল নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএসএফ। ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে রাত্রিকালীন যৌথ টহল বৃদ্ধি করা হবে। পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশের বন্ধ করা উন্নয়নমূলক ৫টি কাজ পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে অনুমোদন পাওয়া গেছে। । এগুলো হলো, রামগড় স্কুল বিল্ডিংয়ের অসম্পন্ন কাজ; তিন বিঘা করিডোর এলাকায় ঝালংগী পকেট এবং ভিতরবাড়ি পকেট এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন; শেরপুর জেলার ভোগাই নদীর তীর সংরক্ষণ; জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদী ও রহিমপুর খালের সংযোগস্থল পুনঃখনন এবং নেত্রকোণা জেলার ভবানীপুর সীমান্তে ১.৪৪ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ।

তিনি আরও বলেন, পূর্বানুমতি ছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ শুরু না করার ব্যাপারে পারস্পরিক সম্মতি হয় উভয় বাহিনীর মধ্যে। এছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কাজ জয়েন্ট ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে সম্মতি পাওয়া গেছে।

ডিজি বলেন, এসব উন্নয়নমূলক কাজগুলো সীমান্তবর্তী জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। আন্তঃসীমান্ত অপরাধ যেমন- মাদক পাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানবপাচার, স্বর্ণ, অস্ত্র, জাল মুদ্রার নোট প্রভৃতি চোরাচালান রোধে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর উভয় পক্ষ থেকে গুরুত্বারোপ করা হয়। উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে উভয়পক্ষ কর্তৃক তথ্য আদান প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে ভবিষ্যতে অপরাধীদের সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে মাঠ পর্যায়ে শেয়ার করতেও উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে উভয় দেশের নাগরিকদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম রোধকল্পে সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ব্যাপারে উভয় পক্ষ গুরুত্বারোপ করেছে।

এবারের সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা/আহতের ঘটনা বন্ধ করা। এ প্রসঙ্গে বিএসএফকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনার জন্য আহ্বান জানান বিজিবি প্রধান। সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিএসএফ মহাপরিচালক আন্তরিকতার সঙ্গে আশ্বাস দেন। এক্ষেত্রে বিএসএফ এর পক্ষ থেকে নন-লেথাল নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। সম্পাদনা: শামসুল হক বসুনিয়া